মাছের মেলা।।
আজ আপনাদের নিয়ে চলি এক অদ্ভুত জায়গা। "মাছ মেলা"। বর্তমানে সরকারি মৎস্য দপ্তর মৎস্য চাষিদের কল্যানে নানান জায়গায় "মৎস্য মেলা" করে তেমন না। এ এক অতি প্রাচীন উৎসব, এই সোনার বাংলায়, চলুন।
নানান বই থেকে পড়েছিলাম, শ্রী চৈতন্যদেব এর সাক্ষাৎ শিষ্য ষট (ছয়)গোস্বামীর অন্যতম শ্রী রঘুনাথ দাস গোস্বামীর শ্রীপাট হুগলির আদিসপ্তগ্রাম এর কাছে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে সরস্বতী নদীর পাশে ছিল। সেখানে প্রতি বছর পয়লা মাঘ 500 বছরের বেশি পুরানো এক মেলা হয়, যার আসল নাম "উত্তরায়ন মেলা", কিন্তু এই মেলাটি "মাছ মেলা" হিসেবেই বেশি পরিচিত। এই মেলায় নানান রকমের মাছ আর বেতের আসবাব বিক্রি হয়, সেই প্রাচীন কাল থেকেই। মেলাতেই মাছ কিনে তা পেঁয়াজ রসুন ছাড়া রান্না করে খাওয়া হয়। মূলতঃ পুড়িয়ে খাওয়া রীতি। এবং আরো অদ্ভুত বিষয়, সম্পূর্ণ শাকাহারি বৈষনবরা ও এই মেলায় মাছ খান, প্রভু নিত্যানন্দের নির্দেশ মেনে। দেখার ইচ্ছা বহুদিন এর, এবার চোখ সার্থক করলাম।
মূল মেলা নিয়ে বলার আগে এর আরেকটু ইতিহাস বলি। এই সপ্তগ্রামের খুব বড় জমিদার ছিলেন গোবর্ধন দাস। তাঁর প্রভূত অর্থ সম্পত্তি ছিল। কিন্তু তাঁর একমাত্র পুত্র শ্রী রঘুনাথ দাসের এসব বিষয় সম্পত্তি, ব্যবসা, নদী বাণিজ্য, এসবে এক্কেবারে মন ছিলোনা। তিনি শ্রী চৈতন্যদেব এর প্রতি আকৃষ্ট হন ছোটবেলা থেকেই। এই সময়ে এই সপ্তগ্রামে শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভু বেশ কিছুকাল বসবাস করতেন, আরেক জমিদার শ্রী উদ্ধারণ দত্ত মহাশয়ের শ্রীপাট এ। (শ্রী উদ্ধারণ দত্ত এর বাড়িতে শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পূজিত ছয় হাতের শ্রী কৃষ্ণ ও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মূর্তির ছবি আগেই দিয়েছি)। তাই শ্রী রঘুনাথ দাস এখানেই নিত্যানন্দ মহাপ্রভু র সংস্পর্শে আসেন ও তাঁর কাছে প্রথমে দীক্ষা নেন ও নাম গানে মত্ত হয়ে ওঠেন। পরে তিনি নিত্যানন্দ মহাপ্রভু র নির্দেশে পুরী তে গিয়ে শ্রী চৈতন্যদেব এর কাছে যান ও দীক্ষা নিয়ে তাঁর এক প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি সন্যাস নিয়ে এই সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন ৮ মাস পর, এই পয়লা মাঘে। সেই দিন তাঁর ভক্তরা তাঁকে মাছ খেতে অনুরোধ করেন এবং ভক্তের অনুরোধ ফেলতে না পেরে তিনি প্রথম মাছ খান। এই ঘটনা স্মরণে প্রতি বছর এই মেলা হয় তাঁর আগমন স্মরণ করে। কথিত পাশেই বয়ে চলা সরস্বতী নদী (এখন এক কচুরিপানা ভর্তি খালের মতন) থেকে ইলিশ মাছ ধরে তাঁকে খাওয়ানো হয়।
এই মেলায় বহু রকম বিশালাকার মাছ আসে, রুই, কাতলা, শোল, রিঠা, বোয়াল, আড়, ভেটকী, দাম ও বেশ কম। দেখার জিনিস। তবে খুব বেশি মানুষ এই মেলার কথা জানেন না, আর বৈষ্ণবরা খুব একটা প্রচার করেননা। রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ। পৌঁছনো বেশ ঝামেলা।
এই বছর মেলা 523 বছরে পা দিলো। এখন ই দেখতে চেয়ে লাভ নেই, আবার সামনে বছর পয়লা মাঘ এ।
How to reach:
Bandel station এ নেমে toto বা auto তে যাওয়া। এছাড়া নিজের চারচাকা বা বাইক থাকলে, NH-2 ধরে মগরা গিয়ে, ওখান থেকে GT road ধরে 2 কিঃমিঃ মতন গেলেই শ্রী কৃষ্ণপুর
Courtesy: Debashis Biswas
No comments:
Post a Comment