কৈলাশ মানস সরোবর যাত্রাঃ
যারা যেতে চান, নিচের তথ্যগুলো উপকারে লাগতে পারে।
- কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে যেতে এবং বেসরকারী সংস্থার সাথে যেতে প্রায় একই খরচা পরে। সরকারী ট্যুরে দিনটা বেশী লাগে৷ কিন্ত বেসরকারী সংস্থার ট্যুরে কয়েকটা দিন কম পরে। সেই হিসাবে ধরলে সরকারী ট্যুর সস্তা।
- সরকারী ট্যুরে মেডিকেল ফিটনেসের প্রচুর কড়াকড়ি। যাবার আগে ঘনঘন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। ফিট না হলেই বাতিল। কিন্তু বেসরকারী ট্যুরে অতো কড়াকড়ি নেই। একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিলেই চলে। তবে ওরা আগেই বলে দেয়,রোগ লুকিয়ে পরে অসুস্থ হলে তার দায় ওরা নেবেনা। এবং তখন মাঝপথ থেকে অসুস্থ হয়ে পরা যাত্রীকে ফিরিয়ে আনতে যা খরচা হবে, তা যাত্রীকেই বহন করতে হবে। এবং সেটা যাওয়ার খরচার প্রায় দ্বিগুন। সরকারী ট্যুরে সরকারকেই সে দায়িত্বটা বাধ্য হয়ে নিতে হয়। তাই এতো মেডিকেল ফিটনেসের কড়াকড়ি।
-এদেশের বেসরকারী সংস্থাগুলো সাধারনত কাঠমান্ডু হয়ে নিয়ে যায়।কেউই নিজেরা নিয়ে যায়না। কাঠমান্ডুর কিছু এজেন্সি আছে, যাত্রীদের তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। যেমন সম্রাট ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস। ওরাই আসলে সব দায়িত্ব নিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যায়। এদেশের ট্রাভেল এজেন্সী যাদের মাধ্যমে যাচ্ছেন, তাদের শুধু একজন থাকে সঙ্গে। পরিস্কারভাবে বলতে গেলে, এদেশের ট্রাভেল এজেন্টরা দালালের কাজ করে। সরাসরি যদি কাঠমান্ডুর এজেন্সীর সাথে যোগাযোগ করা যায়, খরচা বেশ কিছুটা কম পরে। তবে ভিসার জন্য পাশপোর্ট তাদের কাছে পোস্টে পাঠাতে হয়। সেখানে একটু রিস্ক থেকেই যায়৷ এখানকার ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে গেলে, এদের কাছেই পাশপোর্ট দিলে এরাই ওদের মাধ্যমে ভিসা করিয়ে রাখে।
- সরকারী সংস্থা আগে উত্তরাখন্ডের লিপুলেখ পাস দিয়ে নিয়ে যেতো। ট্রেকিং এর পরিমানটা একটু বেশী ছিলো। তাই দিনও বেশী লাগতো। পরে আর একটি রুট যোগ হয়। তা হোল সিকিমের নাথুলা পাস।
-যাত্রা শুরুর আগের দিন বেসরকারী সংস্থা প্রত্যেক যাত্রীকে একই রঙের জ্যাকেট এবং প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট নম্বরযুক্ত ক্রিকেট কিটস ব্যাগের আকারের ঢাউস একটি ব্যাগ দেবে। আপনার প্রয়োজনীয় মালপত্র তাতেই নিতে হবে। আপনার নিজস্ব লাগেজ থাকবে কাঠমান্ডুরই হোটেলে। কাঠমান্ডু থেকে গাড়ী বা বাসে প্রথমদিন রওয়ানা হয়ে নেপাল তিব্বত সীমান্তের শেষগ্রাম কোডারীতে পৌঁছে দেবে। তারপর হেঁটে ফ্রেন্ডসিপ ব্রীজ পার করে চায়না অধিকৃত তিব্বতে ঢুকে পরতে হয়। ব্রীজের প্রান্তে এক মস্তোবড়ো বিল্ডিংএ চাইনিজ অফিসাররা কাগজপত্র পরীক্ষা করে তিব্বতে ঢোকার অনুমতি দেন। এরপর চায়নার বাস বা গাড়ীতে যাত্রা। তিব্বতে ঢুকে প্রথম দুটো রাত acclimatization এর জন্য কাটাতে হয় নিয়ালম এ( ১২,২১০ ফুট)। তৃতীয় রাত কাটাতে হয় পারায়ং এ(১৫,১২৪ ফুট)। চতুর্থ দিন সরাসরি মানস সরোবর (15,060 ফুট) নিয়ে যায়। মানস পরিক্রমার পর চতুর্থ দিন মানসের ধারেই রাত্রিবাস। পঞ্চমদিন কৈলাশের সন্নিকটে দারচেন(১৫,০১০ ফুট)। পরদিন যমদুয়ার পার হয়ে, পা'য়ে হেঁটে কিম্বা খচ্চরের পিঠে চেপে আড়াই দিনের কৈলাশ পরিক্রমা শুরু হয়।
- যারা যাবেন একটা কথা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। তিব্বত চায়নার অধীনে বলে চাইনিজ কারেন্সি 'ইয়ান' চলে। দুর্গম জায়গা বলে ডলার চট করে চলেনা। তাই বিদেশে যাচ্ছেন বলে অহেতুক ডলার নেবার কোন প্রয়োজন নেই। সম্ভব হলে নিজের ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ভাঙ্গিয়ে সরাসরি ইয়ান নিয়ে নিন। অথবা কাঠমান্ডুতে টাকা ভাঙ্গিয়ে ইয়ান নেবার বহু জায়গা আছে। ফেরত আসার সময় ওরাই আবার ইয়ান নিয়ে টাকা দিয়ে দেবে। এতে ট্রান্সফরমেশন চার্জ অল্পে হয়ে যাবে। কিন্তু টাকা ভাঙ্গিয়ে অহেতুক ডলার নিলে, টাকা থেকে ডলারের জন্য, তারপর ডলার থেকে ইয়ান এর জন্য, শেষে আবার ইয়ান থেকে টাকা পেতে সেটার জন্য বাড়তি অনেক টাকা ট্রান্সফার চার্জ বেড়িয়ে যাবে।
বেসরকারী সংস্থার ট্যুরটি কাটমান্ডু থেকে কাঠমান্ডু ধরে মোটামুটি ১২ দিনের। সরকারী সংস্থার দিল্লী থেকে দিল্লী ধরে লাগে ১৮ দিন। সাধারনত জুন, জুলাই, আগস্ট মাস এই যাত্রার সময়। আমরা ২০১৩ সালের ১৮ই জুন কলকাতা থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম। সেসময় কলকাতার ট্রাভেলিং এজেন্টকে মাথাপিছু খরচা দিতে হয়েছিলো ৮৮ হাজার টাকা। ফ্লাইটের খরচা বাদ দিয়ে। যারা প্রকৃতপক্ষে ট্যুরটা করিয়েছিলো, কাঠমান্ডুর সেই 'সম্রাট ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস' এর রেট ছিলো তখন মাথা পিছু ৭০ হাজার টাকা। খচ্চরে কৈলাশ পরিক্রমা করতে চাইলে খরচ পরতো ২০ হাজার টাকা।
এখন শুনেছি সরকারীভাবে যাত্রার খরচাটাই দুলাখ ছাড়িয়ে গেছে।
( নীচের ছবিটা কৈলাশের পাদদেশে সুর্য ওঠার ঠিক আগে এক আশ্চর্য আলোয় তোলার সুযোগ পেয়েছিলাম)।
পুনশ্চঃ
অনেকেই মানস সরোবরের ছবি দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু গ্রুপে একটির বেশী ছবি পোষ্ট করা যায়না। কয়েকজনের প্রশ্নের উত্তরে এই কমেন্ট বক্সেই কিছু ছবি পোষ্ট করেছি। একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।
Courtesy: Abhijit Dasgupta
No comments:
Post a Comment